এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: টানা ছ'দিন পর সচল হলো আখাউড়া স্থলবন্দর। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বন্ধ…
বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১, ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
দেশের অন্যতম বৃহৎ ও শতভাগ রপ্তানিমুখী স্থলবন্দর হওয়া সত্ত্বেও অাখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ক্রমশই কমছে ভারতে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ। বিগত ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মাছ, পাথর, সিমেন্ট, প্লাস্টিক ও ভোজ্য তেলসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পণ্য হতো রপ্তানি। শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যতায় মুখর থাকতো পুরো স্থলবন্দর এলাকা। কিন্তু ত্রিপুরার সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির কারণে এখন সেই কর্মচাঞ্চল্যতায় ভাটা পড়েছে। আগের মতো বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে চান না ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। ফলে প্রতি অর্থবছরেই কমছে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ।
বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি পণ্য স্বল্প পরিমাণে রপ্তানি হচ্ছে আগরতলায়। এ অবস্থায় স্থলবন্দরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে ভারত থেকে চাহিদা সম্পন্ন সকল বৈধ পণ্য আমদানির অনুমতি দিতে সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ অনুমতি দিলে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন, সরকারও পাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্ধারিত কিছু পণ্য আমদানির অনুমতি থাকলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর ও ব্যবসায়ীরা রপ্তানি বাণিজ্যের মাধ্যমেই টিকে আছে। বিগত ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অনেক বেশি সম্প্রসারিত হয়। প্রতিদিন কয়েকশ’ পণ্যবাহী ট্রাক আগরতলা প্রবেশ করতো। এর মধ্যে পাথর ও মাছের ট্রাকই ছিলো সবচে’ বেশি। কিন্তু ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে এখন অনান্য রাজ্যগুলোর সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নতির ফলে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন আগরতলার ব্যবসায়ীরা। আমাদানি খরচ বেশি হওয়ায় তারা নিজেদের দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকেই পণ্য সংগ্রহ করছেন। সবচে’ বেশি চাহিদা সম্পন্ন পাথরও এখন শিলং থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর নানা অজুহাতে ত্রিপুরায় মাছ রপ্তানি কার্যক্রম থমকে আছে দীর্ঘদিন ধরেই। বর্তমানে অাগরতলায় কেবলই তিন-চারটি পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে, এর পরিমাণও অনেক কম। এ অবস্থা চলতে থাকলে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে অাখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়িক কার্যক্রম। অার এতে করে বেকার হয়ে পড়বেন বন্দরের ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আাখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দুই লাখ ১১ হাজার ৫১৭ টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই লাখ ৯ হাজার ৯৬২ টন পণ্য ত্রিপুরায় রপ্তানি করা হয়েছে। ইলিশ, চিংড়ি ও শিং মাছ ব্যতীত সকল প্রকার বৈধ পণ্য রপ্তানির অনুমতি রয়েছে। এসবের বিপরীতে অামদানির অনুমতি রয়েছে গবাদি পশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছগাছড়া, বীজ, চাল, গম, পাথর, কয়লা, রাসায়ানিক সার, পিঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, শুঁটকি, সাতকড়া ও জিরাসহ ৩১টি পণ্য। তবে ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের বিপরীতে বাংলাদেশে চাহিদাসম্পন্ন পণ্য আমদানির অনুমতি চান। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দিন দিন পণ্য রপ্তানির পরিমাণ কমছেই। আগরতলার ব্যবসায়ীরা আগের মতো পণ্য নিচ্ছেন না। তারা এখন কম খরচে নিজ দেশের অন্য রাজ্য থেকেই পণ্য সংগ্রহ করছেন। ব্যবসা কমে যাওয়ায় বন্দরের ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের মাঝে নেই অাগেকার সেই কর্মচাঞ্চল্যতা। যদি সব ধরণের বৈধ পণ্য আমদানির অনুমতি না দেয়া হয়, তাহলে বন্দরের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখাই অসম্ভব হবে। আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা বলেন, ‘আমদানির অনুমতি থাকা পণ্যগুলো আমাদের এখানে চাহিদা নেই। তাই আমরা চাহিদা সম্পন্ন ৩০টি পণ্য নির্ধারণ করে আমদানির অনুমতির দাবী জানিয়েছি। এই অনুমতি দেয়া হলে বন্দরের আগের কর্মচাঞ্চল্যতা অাবারও ফিরে আসবে।’
Leave a Reply