ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ: সম্প্রতি আমার সিলেট ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকেই আমার মনে হয়েছে এ মাজারগুলো দাওয়াতের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠতে…
বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৯:৪১ অপরাহ্ন
খান লিপিকা: আপনি বলবেন কোর্ট-টাই খৃষ্টান ইহুদীদের পোশাক। আমি বলব, পাগড়ী শিখদের পোশাক, গুরু নানকের পোশাক, নরেন্দ্র মোদির পোশাক। টুপি জওহর লাল নেহেরুর পোশাক, গান্ধিজীর পোশাক!
হালের নাস্তিক আব্দুল্লাহ মাসুদ নাস্তিক হওয়ার পরও পায়জামা পাঞ্জাবী পড়ে, টুপি মাথায় দেয়; তারপর মনে যা আসে উল্টা পাল্টা কোরআন ও হাদীছের অপব্যাখ্যা করে। অর্থাৎ সুন্নাতী পোশাক পড়ার পরও সে নাস্তিক, নাস্তিক-ই রয়ে যায়।
মূলত পোশাকের সাথে ইসলামের ইবাদতগত কোন সম্পর্ক নেই। তাইতো রাসুল (ﷺ) এর পোশাক পড়ার ধরনকে ইবাদতগত সুন্নাত নয়,বরং অভ্যাসগত সুন্নাত বলা হয়। আবু জাহেল, আবু লাহাব যেই ধরনের পোশাক পরিধান করতো, রসুল (ﷺ) ও সেই ধরনের পোশাক পরিধান করতেন। শর্ত হলো পোশাক ঢিলে-ঢালা এবং শালিন যেন হয়। আর পোশাক যেন অন্য ধর্মাল ধর্মালম্বীদের সাদৃশ্য না হয়, যেমনঃ ঠাকুর , পপ, ফাদার & মাদার ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْءَاتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَىَ ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
-হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেযগারীর পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতেরঅন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।
[সূরা আল আ’রাফ ২৬]
.
সুতরাং শুধুই সুন্নাতী লেবাশ পরিধান করলেই কেউ সত্যিকারের মুসলিম হতে পারে না। সত্যিকারের মুসলিম হতে হয় আক্বীদা ও বিশ্বাসে, আমল ও কর্মে রাসুল (ﷺ) এর পরিপূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমে!
ইসলামে সুন্নতী পোষাক কোনটি?
======================
শরীয়তে ‘সুন্নতী পোষাক’ বলতে কোন কিছু নাই। বরং পোষাকের ক্ষেত্রে ইসলামের কতিপয় মূলনীতি আছে সেগুলো ঠিক রেখে একজন মুসলিম যে কোন পোষাক পরতে পারে। ইসলাম তার অনুমোদন দিয়েছে। যেমন-
১) পুরুষদের টাখনুর নিচে পরা যাবে না।
২) বিপরীত লিঙ্গের পোষাক পরিধান করা যাবে না।
৩) খুব পাতলা বা আঁটোসাঁটো হওয়া যাবে না। যাতে উচু-নিচু স্থানগুলো (লজ্জাস্হান) ফুটে না উঠে।
৪) বিধর্মীদের ধর্মীয় পোষাকের মত হবে না (যেমন, বৌদ্ধদের বিশেষ কালারের পোষাক)।
৫) সমাজে প্রচলিত নয় এমন অদ্ভুত ডিজাইন, কালার পোষাক পরিধান করা যাবে না যাকে হাদীসে ‘লিবাসুস শুহরাহ’ বলা হয়েছে।
এই শর্তগুলো ঠিক রেখে মুসলিমগণ নিজ নিজে দেশে প্রচলিত পোষাক পরিধান করতে পারে। শরীয়ত তাতে বাধা দেয় না।
জুব্বা, পাঞ্জাবী, গোলজামা, আলখাল্লা, পাগড়ি এসব আঞ্চলিক পোষাক। এগুলোকে সুন্নতী পোষাক বলা ঠিক নয়।
আরব বিশ্বে মুসলিম-খৃষ্টান নির্বিশেষে জুব্বা বা আলখাল্লা পরিধান করত; এখনো পরে।
ভারতের পাঞ্জাব এলাকার লোকেরা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে পাঞ্জাবী পরিধান করে। সেটা পরবর্তীতে আমাদের দেশ সহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
পাগড়ি আরব সহ আরও কিছু এলাকার আঞ্চলিক কালচার। আবু জাহেলও পাগড়ি পরত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও পরতেন। এটা ছিলো সমাজে প্রচলিত পোষাকের অন্তর্ভূক্ত। তবে ইচ্ছে করলে মুসলিমগনও পাগড়ি পরতে পারে। এতে আলাদা ফযিলত সহিহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। এ মর্মে কিছু হাদীস বর্ণিত হলেও সেগুলো কতিপয় বানোয়াট, মুনকার ও অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ের।
অনুরূপভাবে টাইও খৃষ্টানদের ‘ক্রসের চিহ্ন’ এমন কোন কথা ঐতিহাসিকভাবে বা কোন প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত নয়। তাই একজন মুসলিম টাইও পরতে পারে দেশে প্রচলিত পোষাক হিসেবে।
উল্লেখ্য যে, কুরআনে বর্ণিত, ‘লিবাসুত তাকওয়া’ দ্বারা বাহ্যিক কোন পোষাক উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্য হল, তাওকয়া অবলম্বন করা, ঈমান ও আমলে সালিহ।
আল্লাহ তাআলা বলেন: يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّـهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
“হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোষাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র। তাকওয়ার পোষাক; এটি সর্বোত্তম।” সূরা আরাফ: ২৬)
এর ব্যাখ্যায়
⚪কাতাদাহ ও ইবনে জুরাইজ, সুদ্দী বলেন, লিবাসুত তাকওয়া অর্থ: ঈমান
⚪ইবনে আব্বাস রা. বলেন: নেক আমল।
⚪ উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর বলেন: আল্লাহর ভয়।
(দেখুন: তাফসীরে ইবনে কাসীর )
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
যে সমস্ত ভাইয়েরা নিজেদের ঈমান-আক্বিদা, আমলে কুফরী, শির্ক,বিদ’আতের মধ্যে নিমজ্জিত থেকে লম্বা জুব্বা, পাগড়ী জড়িয়ে নিজেদেরকে পাক্কা মুসলিম দাবি করে অথচ শার্ট-প্যান্ট পড়িহিত, শির্ক বিদ’আত মুক্ত,নামাজী মুসলিম ভাইদের তাদের সস্তা ফতোয়া “কাফের ” ছুড়ে দিতেও দ্বিধা বোধ করে না!
Leave a Reply