তখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। নতুন ভার্সিটিতে উঠেছি,অন্য রকম এক অনুভূতি! নিজেকে অনেক…
বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১, ০২:১২ পূর্বাহ্ন
সিহিন্তা আর আমার মাঝে কতো মিল সবাই জানতো। এবং আমিও যে মুসলিম হয়ে যাবো তা সবাই বুঝতো। সরাসরি জোর করতে পারতোনা যদি পালিয়ে বিয়ে করে চলে যাই এই ভয়ে। ইমোশনাল্লি আমাকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলতো। তখন থেকে আমার একটা সমস্যা শুরু হয়। আমি একা থাকতে পারতাম না।একা হলেই মাথায় দুনিয়ার দু:শ্চিন্তা আসতে থাকতো আর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেত।সারারাত ঘুমাতে পারতাম না,ছটফট করে কাটিয়ে দিতাম। ইসলাম পালন করতে পারছিনা ঠিক মতো,আল্লাহ যদি নারাজ হয়?ভয় লাগতো। আবার পালন করতে গেলে যদি মা জেনে যায়,আমি কোথায় যাবো,কিভাবে সব সামলাবো এসব ভেবে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে যেতাম। ঈমান খুব কমে গিয়েছিলো। চিন্তা যাতে মাথায় না আসে তাই নিজেকে ব্যস্ত রাখা শুরু করলাম। ক্লাস শেষে ইচ্ছা করে দেরি করে আসতাম। টিউশনির সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টায় লেগে গেলাম। মার সামনে কম যেতে লাগলাম। মা অনেক বলতো অফিস থেকে আসলে যেন মার সাথে একটু গল্প করি, একসাথে টিভি দেখি। কিন্তু আমি মার কাছে যেতাম না, জানি সিহিন্তার কথা উঠবেই আর আমি যেন এই কাজ না করি বলবেই। কিছু করার না থাকলে গল্পের বই পড়ে বা নেটে ফ্রেন্ডদের সাথে রাত জেগে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতাম। যতোক্ষন না টায়ার্ড হয়ে নিজে থেকে চোখ বন্ধ হয়ে আসতো,ঘুমানোর চেষ্টা করতাম না। মাসের পর মাস কেটে যেতে লাগলো এভাবে। সবাই ভাবতো আমি অনেক হাসিখুশি আছি। কেও বুঝতোনা আমার ভিতরে কি চলছে। নিজের সাথে যুদ্ধ করে করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। অনেকদিন হয়ে গেছে। আমি থার্ড ইয়ারে পড়ি।আমার বোনের বড় ছেলে আনাসের জন্ম হয়ে গেছে। উমারের জন্ম হবে সে বছর্। আমি ডিপ্রেশন থেকে পালাতে নিজেকে এতোই ব্যস্ত করে নিয়েছিলাম যে আমার আর নিজের জন্য সময় ছিলোনা। একটা কোচিং এ পড়াতাম। ৪/৫টা টিউশনি করতাম। একটু সময় ফ্রী পেলে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিয়ে বা ঘুরে কাটিয়ে দিতাম। সালাত পড়তাম,আবার ছাড়তাম। মাঝে মাঝে মাথায় কাপর দিতাম,মাঝে মাঝে দিতাম না। দিন চলতে লাগলো।
আমি সুখি ছিলাম না। সারাক্ষন মাথার মাঝে ঘুড়তো যে আমি মুসলিম হয়েও ইসলাম পালন করছিনা। কোনো কিছুতেই শান্তি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। টিউশনি করে মাসে ভালোই এ্যামাউন্ট হাতে আসতো, পড়ালেখায়ও খারাপ ছিলাম না। তবুও মনে শান্তি ছিলোনা। একদিন দুপুরে বাসায় ছিলাম। কি ভেবে খুঁজে একটা বাংলা কুরআন বের করলাম। সিহিন্তার ছিলো কুরআন টা। অজু করে কুরআন নিয়ে বসলাম। সুরা আল– বাকারা পড়তে লাগলাম। যতোই পড়তে লাগলাম হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগলো। যখন ৭ নাম্বার আয়াতটা পড়লাম কান্না আটকাতে পারলাম না আর। ৭ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ” আল্লাহ তাদের মন ও শ্রবণ–শক্তির ওপর ‘মোহর‘ অঙ্কিত করে দিয়েছেন। এবং তাদের দৃষ্টিশক্তির ওপর আবরণ পড়েছে; বস্তুত তারা কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। ” আল্লাহ চাইলে আমার মনের ওপর মোহর অঙ্কিত করে দিতে পারতেন,তাহলে আমাকে জাহান্নামের আগুন হতে কেও রক্ষা করতে পারতোনা। কিন্তু আল্লাহ তা করেননি। আমি ঠিক মতো সালাত পড়িনা,পর্দা করিনা,তাও তিনি আমাকে সুজোগ দিয়ে যাচ্ছেন! আল্লাহু আকবর! আর আমি কিনা তাও আল্লাহর থেকে দিন দিন দূরে চলে যাচ্ছি! যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত এতোদিনে, আল্লাহকে আমি কি জবাব দিতাম?কি মুখ নিয়ে তাঁর সামনে যেতাম! সঠিক পথের সন্ধান পাওয়ার পরেও,সত্য জানার পরেও কিভাবে আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে,আল্লাহর ইবাদাত না করে থাকতে পারছি! কাঁদতে কাঁদতে দুআ করতে লাগলাম,আল্লাহ আমার মনের ওপর মোহর অঙ্কিত করে দিওনা কখনও। আর আমার মার মনের ওপর মোহর অঙ্কিত করে থাকলে তা সরিয়ে দাও। আমাকে যেভাবে হেদায়েত দিয়েছো আমার মাকেও হেদায়েত দাও। আমি যদি জান্নাতে যেতে পারি আমার মা যেন আমার পাশে থাকে। অনেক কেঁদেছি সেদিন। কাঁদতে কাঁদতে আরো পড়তে লাগলাম। আল্লাহ আরো কি কি বলেছেন জানার চেষ্টা করলাম। সুরা আল–বাকারা এর ৬২ নাম্বার আয়াতে এসে আবার কেঁদে দিলাম। এই আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় জেনো, শেষ নবীর প্রতি বিশ্বাসী হোক, কি ইহুদি, খ্রিস্টান কিংবা সাবীই – যে ব্যক্তিই আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনবে ও নেক কাজ করবে, তার পুরষ্কার তার রব্ব এর নিকট রয়েছে এবং তার জন্য কোনো প্রকার ভয় ও চিন্তার কারন নেই। ” আলহামদুলিল্লাহ!! এতোদিনের ডিপ্রেশন ওই এক মূহুর্তেই শেষ হয়ে গেলো। আল্লাহ আছেন,নিজে বলেছেন আমার কোনো ভয় বা চিন্তার কারন নেই। তাহলে কি জন্য আমি হতাশ হবো!
Leave a Reply